সাকিব ফেসবুক সহ বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট খোলার জন্য একটি ই-মেইল একাউন্ট ক্রিয়েট করেছিলো। এই ই-মেইল একাউন্ট তার অনেক কাজে দেয়। নতুন নতুন ওয়েবসাইটে গেলে বেশিরভাগ ওয়েবসাইট-ই তার ই-মেইল চেয়ে বসে। শুরুতে সাকিব ই-মেইল একাউন্ট চাওয়া মাত্র দিতে চায় না। কিন্তু দেখা যায়, ই-মেইল একাউন্ট না দিলে ঐ সমস্ত ওয়েবসাইট তাদের আর্টিকেল পড়তে দেয় না বা দেখতে দেয় না। সাকিবকে অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধে ই-মেইল আইডি দিতে হয়, কারণ তাদের ওয়েব সাইটের কিছু ইনফরেশন সাকিবের খুব জানার দরকার হয়। পরবর্তীতে সে দেখলো শুধুমাত্র ই-মেইল একাউন্ট দিলে তেমন একটা ক্ষতি হয় না, বরং সে তার কাঙ্খিত কন্টেন্ট দেখতে পারে।
সাকিব আইফোন ব্যবহারকারী। আইফোন ব্যবহার করার শুরুতে তার একটি অ্যাপল একাউন্ট ওপেন করতে হয়েছিল । সেই অ্যাপল একাউন্ট খুলতে তাকে তার ই-মেইল আইডি দিতে হয়েছিলো। এখন তার ইমেইল একাউন্টে অ্যাপল এর যে-কোন এনাউন্সমেন্ট থেকে শুরু করে তাদের নতুন নতুন প্রোডাক্টের কথা সাকিবকে ই-মেইল এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। এমনকি এইবছর নতুন যে আইফোন এসেছে, সেটি সম্পর্কেও সাকিব জানতে পেরেছিলো অ্যাপল এর পাঠানো ই-মেইল এর মাধ্যমে। সাকিবকে ই-মেইলের মাধ্যেমে অ্যাপল এর বিভিন্ন প্রোডাক্টের সম্পর্কে জানানোর প্রকৃয়াই হচ্ছে ই-মেইল
ই-মেইল মার্কেটিং কি?
ই-মেইলকে ব্যবহার করে কমার্সিয়াল মেসেজ প্রেরণের মাধ্যেমে সেলস জেনারেট করার প্রকৃয়াকে বলা হয় ই-মেইল মার্কেটিং। এটি একটি ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। যার মাধ্যমে টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে সরাসরি কোন পন্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। এই ই-মেইল গুলো অনেক কিছু বহন করে- যেমন প্রয়োজনীয় তথ্য, কোম্পানির খবর, বিজ্ঞাপন, স্পেশ্যাল অফার, এবং সেলস মিটিং এর নিমন্ত্রন পত্র সহ আরো অনেক কিছু।
ইমেইল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ন?
আমরা এতক্ষন জানলাম ই-মেইল মার্কেটিং কি সেই সম্পর্কিত তথ্য। কিন্তু তার চেয়েও আরো গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে কেন ই-মেইল মার্কেটিং আপনার বিজনেসে জন্য গুরুত্বপূর্ন।
চলুন এবার এটির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে কথা বলি।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর বাদ বাকি যেসব সেক্টর রয়েছে সেগুলোতে মার্কেটিং করে সরাসরি কাস্টমারের কাছে রিচ করার কোন সুযোগ নেই। শুধু মাত্র ই-মেইলের মাধ্যমে সরাসরি মাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করা যায়। এজন্য ইমেইল মার্কেটিং কে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
ই-মেইল মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ন হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন-
ইমেইল সবচেয়ে বেশি ROI সৃষ্টি করে- শুরুতে বলে নিই আরওআই কি। এটি একটি ইংরেজি ফাইনেন্সিয়াল ম্যাট্রিক্স। ROI -Return on investment । এটির বাংলা অর্থ হচ্ছে যা ইনভেস্ট করবেন তাই আবার রিটার্ন হিসেবে পাবেন। ভেনচারবিট এর তথ্য মতে ই-মেইল মার্কেটিং হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি যেখানে আপনি গড়ে প্রতি ১ ডলার খরচ এর বিপরীতে ৩৮ ডলার রিটার্ন ইন ইনভেস্টমেন্ট পাবেন। এছাড়া ম্যককিনসের রিপোর্ট অনুযায়ী – ফেসবুক এবং টুইটার মার্কেটিং এর তুলনায় ৪০ গুন বেশি কার্যকর এই ই-মেইল মার্কেটিং। ডিএমএ নামক একটি প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে যে- সাধারণ মার্কেটিং এর তুলনায় ইমেইল মার্কেটিং ফলাফল ৬০% এর বেশি কার্যকর।
ইমেইল সর্বাধিক সংখ্যক রিচ করে- রেডিক্যাটির তথ্য মতে শুধু ২০১৯ এ সারাবিশ্বে একটিভ ইমেইল একাউন্ট ব্যবহার কারীর সংখ্য ২.৯ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। যেটি টুইটার এবং ফেসবুকের মোট একটিভ ইউজারের যোগফল থেকে বেশি। কারন ফেসবুকের গত বছর টোটাল একটিভ ইউজার ছিলো ১.৮ বিলিয়ন। আর টুইটারে ছিলো ৩১৫ মিলিয়ন। এই দু’ই জায়ান্ট কোম্পানির মোট একটিভ ইউজারের যোগফল এর সমান একটিভ ইমেইল একাউন্ট ব্যবহারকারীর। আর বেশি একটিভ ইউজার মানে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে রিচ করা। বেশি রিচ করা মানে বেশি সেল। তাই এই ইমেইল মার্কেটিং হতে পারে নতুন উদ্দোক্তাদের প্রধান হাতিয়ার।
মোবাইল ফ্রেন্ডলি ইমেইল মার্কেটিং এর সর্বাধিক বিস্তার- সেলসফোর্স এর তথ্য অনুসারে, ৬৮% কোম্পনি তাদের মার্কেটিং করার জন্য মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছানো যায় এমন কিছু খুঁজে থাকেন। তাদের জরিপ আরো বলে থাকে যে, ৭৯% মানুষ তাদের মেইল চেক করার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন। সেক্ষেত্রে বিশাল একটি সম্ভাবনায় ক্ষেত্র এটি মার্কেটার দের দিক থেকে চিন্তা করলে। এছাড়া তারা আরো দাবি করে থাকেন যে, গত তিন বছরে মোবাইলে ইমেইল চেকিং এর হার বেড়েছে প্রায় ১৮০ শতাংশের ও অধিক। তাই ইমেইল কে মোবাইল ফ্রেন্ডলি করে তৈরি কর মার্কেটিং করতে পারলে বিশাল এক জনগোষ্ঠির নিকট মার্কেটিং করা আরো সহজ হয়ে পড়বে।
আমেরিকানদের অনলাইন এক্টিভিটি–
ফেসবুক ৬০%
ইন্সটাগ্রাম ৩৫%
ই-মেইল ৯০%
এই ৯০% ইমেইল চেক করা মানুষের মধ্যে ৪০% ইউজার দৈনিক কমপক্ষে ১-৩ বার ই-মেইল চেক করেন ।
এই সব তথ্য উপাত্ত দেখলে ধারণা করা যায় ইমেইল মার্কেটিং কতটা গুরুত্বপূর্ন আপনার বিজনেস গ্রো করার জন্য। আশা করি পাঠক ভালো একটা ধারণা পেয়েছে।
ইমেইল মার্কেটিং এর ইতিহাস
যদিও ইমেইল মার্কেটিং এর সর্বাধিক বিস্তার ঘটেছে একবিংশ শতাব্দিতে। কিন্তু যাত্রা শুরু হয়েছিলো বিংশ শতাব্দির শেষ কোয়াটারে। এই পর্যায়ে আমরা আলোচনা করবো ইমেইল মার্কেটিং এর ইতিহাস নিয়ে।
ঘটনাটা ১৯৭৮ সালের। গ্রে থিউর্ক নামক এক মার্কিন মার্কেটার তাদের প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট কর্পরেশন’ এর প্রচারনার জন্য ARPANET নামক আমেরিকান, ওয়াইড এরিয়া প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্ক, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৪০০ সম্ভাব্য কাস্টমারের নিকট তাদের বিজ্ঞাপন পাঠিয়েছেন। এর পর তিনি দাবি করলেন যে, প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার সম মূল্যের পন্য বেশি বিক্রি হয়েছে শুধু মাত্র এই ইমেইল মার্কেটিং করার ফলে। এর পরপর সারা বিশ্বের মানুষ দেখতে পেল ইমেইল এর মাধ্যমে মার্কেটিং এর নতুন সম্ভাবনাময় দুয়ার। তাঁরপর ইমেইল মার্কেটিং কে আর পায় কে, দিনে দিনে হয়ে উঠলো সমচেয়ে কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
ইমেইল মার্কেটিং এর ধরণ
৩৩% কনজিউমার মনে করে থাকেন ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে তারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন যখন বিভিন্ন অফারের কথা জানতে পারেন খুব সহজে। অনেকেই তাদের ইমেইল চেক করে থাকেন বিভিন্ন ওয়েবসাইট এর দারুন দারুন অফার খুঁজে পেতে।
এই পর্যায়ে আমরা বলতে চেষ্টা করবো কত ধরনের ইমেইল স্টাইল রয়েছে যেগুলো মার্কেটিং এর জন্য স্পেশ্যালি ব্যবহার করা হয়। চলুন শুরু করা যাকঃ
ওয়েলকাম ইমেইল- প্রায় ৭৫% ব্যবহার কারী আশা করে থাকেন যে, যখন তারা নতুন কোথাও সাইন আপ করে থাকেন তখন তারা একটি ওয়েলকামিং মেইল পাবেন। ওয়েলকাম ইমেইল বলা হয়ে থাকে কোন সাবস্ক্রাইবারকে পাঠানো সর্বপ্রথম ইমেইলকে।
এবান্ডন্ট কার্ট ইমেইল- ইকমার্স সাইটে যখন কেউ অনেক গুলো পন্য সিলেক্ট করে আসেন বা না কিনে ওয়েবসাইট থেকে বের হয়ে আসেন, তখন ওয়েবসাইট কতৃক পাঠানো রিমাইন্ডাল মূলক মেইল গুলোকে বলা হয়ে থাকে এবান্ডন্ট কার্ট ইমেইল। এই এবান্ডন কার্ট ইমেইল গুলো ৪.৫৬% পর্যন্ত কনভার্সন রেট বাড়াতে পারে।
ট্রানজেকশনাল ইমেইল- এই ধরণের ইমেইল গুলো সাধারণত হয়ে থাকে পার্চেস রিসিপট, পাসওয়ার্ড রিসেট, কার্ট এবান্ডনমেন্ট, সাপোর্ট রিকোয়েস্ট টাইপের।
রিওয়ার্ড ইমেইল- এটি একটি অটোমেটেড ইমেইল টেমপ্লেট, যা মূলত ডিজাইন করা হয়েছে বিশ্বস্ত কাস্টমারদের স্পেশাল অফার দেওয়ার জন্য। এই ধরনের ইমেইল গুলো কনভার্সন রেট বাড়াতে যথেষ্ট ভুমিকা রেখে থাকে।
ফ্ল্যাশ সেইল ইমেইল- এই ধরণের ইমেইল টেমপ্লেট ব্যবহার করে থাকে সাধারনত ওয়েবসাইটে ট্রাফিক জেনারেট করানোর উদ্দেশ্য থেকে সেল বাড়ানোর মত উদ্দেশ্য নিয়ে। অনেক কাস্টমার আছেন তারা শুধু ইমেইল চেক করে থাকেন এই ফ্ল্যাশ সেইল ইমেইল চেক করার জন্য। তবে এই ধরনের মেইল গুলো অনেক সময় স্প্যাম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কারণ এই ধরনের ইমেইল এ বেশি চটকদার অফার থাকে। তাই অনেকে ফ্ল্যাগড করে রাখেন নতুবা স্প্যাম করে রাখেন।
আপনার প্রতিষ্ঠানের বা সেবার যে কোন ধরনের অনলাইন মার্কেটিং এর জন্য নিশ্চিন্তে ভরসা করতে পারেন Proxima Infotech এর উপর